৫৪ বছরেও সবার জন্য সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠিত হয়নি: জোনায়েদ সাকি

৫৪ বছরেও দেশে সবার জন্য সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠিত হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি। শনিবার (১৬ আগস্ট) দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে আয়োজিত পদযাত্রা ও গণসংলাপে বক্তব্যকালে এমন মন্তব্য করেন তিনি।

গণসংলাপে জোনায়েদ সাকি বলেন, ১৯৭১ সালে শ্রমিক, কৃষক, ছাত্র, তরুণরা রক্ত দিয়ে একটা রাষ্ট্রের পত্তন করেছে, কিন্তু সেই রাষ্ট্র তাদের আকাঙ্ক্ষিত রাষ্ট্র হয়নি। মানুষের স্বপ্ন ছিল সব নাগরিকের জন্য সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা। সাম্য মানে হলো সুযোগের সমতা। সবাই যাতে সমান সুযোগ পায়। সকলের জন্য এই সুযোগের সমতা গত ৫৪ বছরে প্রতিষ্ঠিত হয়নি।

প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, যাদের ধন-সম্পদ আছে তাদের ছেলে-মেয়েরা ভালো স্কুলে পড়বে, তারা সব সুযোগ সুবিধা পাবে, আর আমার দেশের কৃষক-শ্রমিক যারা দেশের সম্পদ তৈরি করে, তাদের সন্তানরা ঠিকমতো লেখাপড়া করতে পারবে না, তাদের স্কুলগুলো ভালো হবে না, তাদের খেলাধুলার আয়োজন থাকবে না- এটা কি ন্যায়সঙ্গত? এটা কি সাম্য?

গণসংহতি আন্দোলনের এই প্রধান সমন্বয়কারী বলেন, আমাদের দেশের তরুণরা রাজনীতি সচেতন, এটা আমাদের ইতিহাসে বহুবার প্রমাণিত হয়েছে। তরুণরা এদেশে রক্ত দিয়ে, জীবন দিয়ে যে ইতিহাস তৈরি করেছে, তার তুলনা মেলা কঠিন। আমরা এক ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণে আছি। এই সময়ে আমাদের তরুণদের রাজনৈতিক সচেতন ভূমিকা খুবই প্রয়োজন।

জোনায়েদ সাকি বলেন, মানবিক মর্যাদা মানে এই দেশের নাগরিক হিসেবে মানুষের মর্যাদা থাকতে হবে, রাষ্ট্র তার মর্যাদা দেবে। সে কোন ধর্মের, কোন জাতির, কোন লিঙ্গ-পরিচয়ের মানুষ, তার রাজনৈতিক বিশ্বাস কী- এগুলো ব্যক্তিগত ব্যাপার। ওই ব্যক্তি যদি অন্যের ওপর জবরদস্তি আর অন্যায় না করে, তাহলে তার বিশ্বাস বা পরিচয়ের কারণে তার ক্ষতি করা যাবে না। এটাই মানবিক মর্যাদা।

তিনি বলেন, আমাদের ছাত্ররা বলেছিল, কোটা দিয়ে বৈষম্য করা হচ্ছে, আমরা এই বৈষম্য মানি না। আমরা বৈষম্যহীন বাংলাদেশ চাই। এটা ছিল একজন শিক্ষার্থীর স্বাধীন চিন্তার প্রকাশ। এটা বলার তার পূর্ণ অধিকার ছিল এই দেশে। কিন্তু সেটা মানা হয়নি। তাদের ওপর গুলি করা হয়েছে। সবার সামনে পুলিশ গুলি করে আবু সাঈদকে হত্যা করেছে। এর আগে ১৫ বছর ধরে দিনের পর দিন কথা বলার জন্য, রাজনৈতিক অধিকারের জন্য, নিজের পছন্দমতো রাজনৈতিক দল করার জন্য, সংগঠন করার জন্য মানুষের ওপর বিগত সরকার পরিকল্পিতভাবে রাষ্ট্রীয় বাহিনী দিয়ে গুম, খুন, ভয়-ভীতি, ত্রাস তৈরি করে, হত্যা করে নিজেদের গদি টিকিয়ে রেখেছে।

জোনায়েদ সাকি বলেন, আমরা দেখেছি কীভাবে আমাদের দেশে বিভাজন তৈরি করেছে, কীভাবে আমাদের দেশের মানুষে মানুষে দ্বন্দ্ব লাগিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছে, কীভাবে আমাদের দেশে ধর্ম, জাতি, লিঙ্গ-পরিচয়ের দিক থেকে যারা ক্ষমতার মধ্যে প্রান্তিক হয়ে যান, যারা সংখ্যায় কম, তাদের নিপীড়নের শিকার করা হয়েছে, একটা ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছে তাদের জীবনে। এগুলো মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করা বলে না। গত ৫৪ বছরে মানুষের মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হয়নি।

ফুলবাড়ীর গোলাম মোস্তফা উচ্চ বিদ্যালয় হল রুমে আয়োজিত ওই গণসংলাপের সঞ্চালনায় ছিলেন গণসংহতি আন্দোলনের ফুলবাড়ী উপজেলার ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব মোত্তালিব পাপ্পু। এছাড়া গণসংলাপের সভাপতিত্ব করেন দলের উপজেলা আহ্বায়ক মাহমুদ হাসান বাবু।

গণসংলাপে অন্যদের মধ্যে গণসংহতি আন্দোলনের সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য বাচ্চু ভূইয়া, উপদেষ্ঠামণ্ডলীর সদস্য নাজার আহমেদ, রংপুর জেলা আহ্বায়ক তৌহিদুর রহমান, সদস্য সচিব মোফাখারুল ইসলাম মুন, বগুড়া জেলা আহ্বায়ক আব্দুর রশিদ, দিনাজপুর জেলা আহ্বায়ক সুলতান মাহমুদ শিশির, ফুলবাড়ি উপজেলা সংগঠক সৈয়দ সাইফুল ইসলাম জুয়েল, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস জামানসহ স্থানীয় বিভিন্ন ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।