শিগগিরই সাড়ে ৫ লাখ রোহিঙ্গার নাম যাচাই বাছাই শুরু করবে মিয়ানমার: ড. খলিলুর রহমান
আগামী দুই বছরে চেয়ারম্যান হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিমসটেককে আরও কার্যকর ও গতিশীল করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. খলিলুর রহমান।
এ ছাড়া মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে কক্সবাজারে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের মধ্যে এক লাখ ৮০ হাজারকে দেশটিতে ফিরিয়ে দিতে পারলেও সময় লাগবে বলে জানান তিনি।
মঙ্গলবার রাজধানীর বেইলি রোডের ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন ড. খলিলুর রহমান। তিনি বলেন, আগামী দুই বছরের জন্য বিমসটেকের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করবেন প্রধান উপদেষ্টা।
তিনি বিমসটেকের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনকালে সমুদ্রপথে আঞ্চলিক যোগাযোগ বৃদ্ধির মাধ্যমে সবাই উপকৃত হবে। বিমসটেকের সদর দফতর বর্তমানে ঢাকায় অবস্থিত, আমরা আশাবাদী যে সব দেশ মিলে আমরা একসঙ্গে কাজ করতে পারবো।
বিমসটেক সদস্য দেশগুলোর মধ্যে বহুল আলোচিত মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির (এফটিএ) বিষয়ে অগ্রগতি হয়নি উল্লেখ করেন ড. খলিলুর রহমান বলেন, তবে ঢাকা এ প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার উদ্যোগ নেবে। সম্মেলনের সময় সদস্য দেশগুলোর মধ্যে সামুদ্রিক পরিবহন সহযোগিতা সংক্রান্ত একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে বলেও জানান তিনি।
প্রধান উপদেষ্টার হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ বলেন, আমরা আশা করছি যে সামুদ্রিক পরিবহন, বন্দর ব্যবস্থাপনা এবং আঞ্চলিক সহযোগিতা আরও জোরদার হবে। সদস্য দেশগুলোর মধ্যে সংযোগ বৃদ্ধি পাবে।
দুই বছরের জন্য বঙ্গোপসাগরীয় দেশগুলোর আঞ্চলিক সহযোগিতা জোটের (বিমসটেক) চেয়ারম্যানশিপ গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ।
মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ শিগগিরই সাড়ে ৫ লাখ রোহিঙ্গার নাম যাচাই-বাছাই শুরু করবে জানিয়ে ড. খলিলুর রহমান জানান, তিনি ব্যাংককে অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে মিয়ানমারের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী উ থান শিউ-এর সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে অগ্রগতি হয়েছে দাবি করে ড. খলিলুর রহমান বলেন, মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ প্রত্যর্পণ উপযুক্ত আড়াই লাখ রোহিঙ্গার মধ্যে এক লাখ ৮০ হাজার জনকে চিহ্নিত করেছে। ৭০ হাজার রোহিঙ্গার নাম ও ছবির বিষয়ে কিছু বিভ্রান্তি রয়েছে এবং এ বিষয়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার আলোচনা চালিয়ে যাবে বলে জানান তিনি।
হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ আরো বলেন, ২০১৮ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ ছয়টি ব্যাচে মোট ৮ লাখ রোহিঙ্গার একটি তালিকা মিয়ানমারকে পাঠিয়েছে। তিনি বলেন, মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে যে তারা বাকি সাড়ে ৫ লাখ রোহিঙ্গার তালিকা যত দ্রুত সম্ভব যাচাই-বাছাই শেষ করবে।
রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে জানিয়ে ড. খলিলুর রহমান বলেন, আরাকান আর্মির সঙ্গেও আলোচনা শুরু করেছি। রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া এটা তাদের একটা প্রিন্সিপাল পজিশন। গত বছরের সেপ্টেম্বরে আলোচনা হয়েছে। এবারে আলোচনায় আবারও পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
সে কারণে আমরা মনে করি, এক লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফিরিয়ে দেওয়ার বন্দোবস্ত আমরা করতে পারব, তবে সময় লাগবে। এটা তো কালকে হচ্ছে না, যাতে দ্রুত সময়ে যেতে পারবে সেই প্রচেষ্টাই থাকবে। প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন যে, আগামী ইফতার (আগামী বছর রমজান) তারা দেশে গিয়ে করবে। এটাই আমাদের লক্ষ্য।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের আগে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ব্যাপারে কাজ করতে হবে। এজন্য আরাকান রাজ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠা সর্বাগ্রে প্রয়োজন। যুদ্ধাবস্থায় তাদের ফিরিয়ে দেওয়া যাবে না। এজন্য সে দেশে দুপক্ষের মধ্যে যুদ্ধবিরতি হতে হবে। এ ব্যাপারে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মহলের সহযোগিতা দরকার।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, উপ-প্রেস সচিব অপূর্ব জাহাঙ্গীর ও সহকারী প্রেস সচিব নাঈম আলী।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: