সুরাহা ছাড়াই রাজনৈতিক দলগুলোর সমঝোতার সময়সীমা শেষ, সংকট হলে দায় তাদেরই

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: ১০ নভেম্বর ২০২৫ ১৬:১১ পিএম

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে গণভোট ও জুলাই সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে রাজনৈতিক অঙ্গন। ‘অমীমাংসিত’ এ ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলোকে বসে ‘ঐকবদ্ধ’ সিদ্ধান্ত নিতে এক সপ্তাহের সময় বেঁধে দিয়েছিল অর্ন্তবর্তী সরকার। তবে কোনো সুরাহা ছাড়াই সোমবার (১০ নভেম্বর) সরকারের দেয়া সেই সময় শেষ হচ্ছে।

এই অবস্থায় ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবের ভিত্তিতে সরকারকেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিতে হবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। সেই সঙ্গে ভবিষ্যতে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ও গণভোট ইস্যুতে কোনো অনিশ্চয়তা তৈরি হলে, রাজনৈতিক দলগুলোকেই এর দায় নিতে হবে বলেও অভিমত বিশ্লেষকদের।

রাজনৈতিক মতভেদে উদ্বেগ প্রকাশ করে গত ৩ নভেম্বর সরকারের পক্ষ থেকে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেয়া হয়, ‘ঐকমত্যে’ পৌঁছাতে আর কোনো আলোচনার উদ্যোগ নেয়া হবে না। এখন রাজনৈতিক দলগুলোকে এক সপ্তাহের মধ্যে নিজেরা আলোচনা করে ‘ঐকবদ্ধ’ সিদ্ধান্ত নিতে হবে। নাহলে গণভোট ও জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ইস্যুতে সিদ্ধান্ত দেবে অন্তর্বর্তী সরকার। যদিও এ নিয়ে সপ্তাহজুড়ে রাজনৈতিক দলগুলোর পাল্টাপাল্টি বক্তব্যের মধ্যে বিচ্ছিন্ন উদ্যোগ থাকলেও, কোনো সুরাহা আসেনি।

জুলাই সনদে সংবিধান সংস্কারের সুপারিশ বাস্তবায়নে সরকারকে দু’টি বিকল্প প্রস্তাব করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। রাজনীতি বিশ্লেষক অধ্যাপক আসিফ মোহাম্মদ শাহান বলছেন, এর মধ্য থেকেই সংকট উত্তোরণের রূপরেখা খুঁজতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের এই অধ্যাপকের ভাষ্য, এখন সরকারেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তবে সরকার যদি এই ২ বিকল্প বাদ দিয়ে নতুন কোনোকিছু উপস্থাপন করে যে, নোট অব ডিসেন্টসহ গণভোট হবে, আমার ধারণা সেটি এই মুহূর্তে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে গ্রহণযোগ্য হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম।

তবে পুরো প্রক্রিয়ার মধ্যে শুভঙ্করের ফাঁকি আছে বলে মনে করেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী। তার মতে, বিদ্যমান সংবিধান আর জুলাই সনদের মারপ্যাচ জটিলতা বাড়াচ্ছে।

অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী বলেন, যদি গণভোট নির্বাচনের আগে না হয় তাহলে কিন্তু ১৯৭২ সালের সংবিধানের আওতায় আসন্ন নির্বাচন হবে। যেখানে গণভোট নেই। তখন বিএনপি কিন্তু বলতে পারে- যে গণভোট হয়েছে, সেটি আমরা মানি না, কারণ গণভোট সংবিধানে নেই। এই জায়গায় একটি বড় শুভঙ্করের ফাঁকি আছে।

এই দুই বিশ্লেষকের মতে, সংকট সমাধানে দলগুলোর দায়িত্বশীল আচরণ এখন সবচেয়ে জরুরি। তা নাহলে সংঘাতের আশঙ্কার পাশাপাশি অনিশ্চিত হতে পারে নির্বাচনও। অধ্যাপক আসিফ শাহান বলেন, সুরাহা না হলে অনেকগুলো রাজনৈতিক দল হয় নির্বাচন পেছানোর কথা বলবে, যেটি খুব একটা গ্রহণযোগ্য হবে না। আর নাহয় তারা বলবে তারা নির্বাচনে অংশ নেবে না। এতে আবারও সংঘাতের আশঙ্কা বেড়ে যাবে। এই অবস্থায় রাজনৈতিক দলগুলোর দায়িত্বশীল আচরণ খুব জরুরি।

অন্যদিকে অধ্যাপক দিলারা চৌধুরীর ভাষ্য, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী যে ‘ঢাকা চলো’ কর্মসূচি দিয়েছে, এই অবস্থায় বিএনপি যদি পাল্টা কর্মসূচি দেয়, তাহলে তো সংঘাতের আশঙ্কা তৈরি হবে। আর সংঘাত হলে নির্বাচনও ঝুলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এজন্য সংকট সমাধানে দলগুলোর দায়িত্বশীল আচরণ এখন সবচেয়ে জরুরি।

তবে শেষ পর্যন্ত অন্তর্বর্তী সরকার যে সিদ্ধান্ত নেবে, সেটি সব পক্ষকে সন্তুষ্ট করতে পারবে নাকি নতুন কোনো অনিশ্চয়তা তৈরি করবে, এটি নির্ভর করছে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যকার বোঝাপড়া আর ছাড় দেয়ার মানসিকতার ওপর।

LIMON

আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর