চিকেনস নেকে ভারি যুদ্ধাস্ত্র মোতায়েন ভারতের

প্রকাশিত: ০৬ এপ্রিল ২০২৫ ০৯:০৪ এএম

ভারতের ‘চিকেনস নেক’খ্যাত শিলিগুড়ি করিডোরের নিরাপত্তা জোরদার করেছে নয়াদিল্লি। অত্যাধুনিক যুদ্ধাস্ত্রের পাশাপাশি সেখানে মোতায়েন করা হয়েছে এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থাও।

পশ্চিমবঙ্গের এই সংকীর্ণ ভূমি ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোকে দেশটির অন্যান্য অংশের সঙ্গে সংযুক্ত করেছে। এ করিডোরের সঙ্গে রয়েছে নেপাল, বাংলাদেশ, ভুটান ও চীনের সীমান্ত।

কয়েক দিন আগে চীন সফরে গিয়ে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ভারতের সেভেন সিস্টার্স নিয়ে মন্তব্য করেন। সেখানে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও বাংলাদেশে চীনের সম্ভাব্য বিনিয়োগের বিষয়ে কথা বলেন তিনি। এরপর কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ শিলিগুড়ি করিডোরের সুরক্ষা সম্পর্কে ভারতে উদ্বেগ দেখা দেয়। এর মধ্যে গত শুক্রবার আঞ্চলিক জোট বিমসটেকের শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এরপর এ করিডোরে নিরাপত্তা জোরদারের বিষয়টি সামনে এলো।

ভূ-রাজনীতির সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে ভারত গুরুত্বপূর্ণ শিলিগুড়ি করিডোরের নিরাপত্তায় ব্যাপক সুরক্ষা ব্যবস্থা বৃদ্ধি করেছে বলে মনে করা হচ্ছে।

ভারতীয় সেনাবাহিনী এই করিডোরকে নিজেদের শক্তিশালী প্রতিরক্ষা লাইন হিসেবে মনে করে। এই পথ ব্যবহার করে সামরিক প্রস্তুতির মাধ্যমে যে কোনো ধরনের সম্ভাব্য হুমকির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রস্তুতি রয়েছে তাদের।

করিডোরের পার্শ্ববর্তী সুকনায় রয়েছে দেশটির সামরিক বাহিনীর ত্রিশক্তি কর্পসের সদরদপ্তর। ত্রিশক্তি কর্পস রাফাল যুদ্ধবিমান, ব্রহ্মস ক্ষেপণাস্ত্র এবং উন্নত প্রযুক্তির আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাসহ অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত।

ভারতীয় সেনাপ্রধানের সাম্প্রতিক বক্তব্য করিডোরের সুরক্ষার বিষয়ে ভারতের অবস্থানকে আরো জোরদার করেছে। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠার পরিবর্তে চিকেনস নেককে ভারতের সবচেয়ে শক্তিশালী সামরিক অঞ্চল হিসেবে গড়ে তোলা হবে।

ওই অঞ্চলে নিরাপত্তা বৃদ্ধির পদক্ষেপ হিসেবে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী উন্নত সামরিক অস্ত্র ও ব্রহ্মস ক্ষেপণাস্ত্র রেজিমেন্ট মোতায়েন করেছে। এ ছাড়া আকাশপথ ব্যবহার করে যে কোনো ধরনের হামলা ঠেকাতে ওই অঞ্চলে মোতায়েন করা হয়েছে এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা। যে কোনো ধরনের অনুপ্রবেশের বিরুদ্ধে আকাশসীমার সুরক্ষা নিশ্চিতে অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা হিসেবে এমআরএসএএম ও আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মোতায়েন রাখা হয়েছে।

বেইজিংয়ের সঙ্গে ঢাকার ক্রমবর্ধমান সম্পর্ক ভারতের জন্য কৌশলগত, বিশেষ করে শিলিগুড়ি করিডোরের নিরাপত্তার বিষয়ে চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে বলে মনে করছেন ভারতীয় নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা। এমন পরিস্থিতিতে ভারত ওই অঞ্চলে নিজেদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করেছে।

২০১৭ সালে ভুটানের ভূখণ্ডের দোকলামে চীনা সামরিক বাহিনীর একটি সড়ক নির্মাণ কাজে ভারতীয় বাহিনীর বাধা দেওয়ার ঘটনায় ব্যাপক অস্থিরতা তৈরি হয়। সেই সময় চিকেনস নেকের নিরাপত্তার বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে ওঠে। কারণ দোকলামের ওই সড়ক ধরে শিলিগুড়ি করিডোরে পৌঁছানোর পথ অনেক সহজ হয়ে যেত। কিন্তু ভারতীয় সামরিক বাহিনীর বাধার মুখে শেষ পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ থেকে পিছু হটে চীন। অতীতের এসব ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে ওই অঞ্চলে নিজেদের প্রতিরক্ষা অবকাঠামো নির্মাণ ও প্রস্তুতি বাড়িয়ে চলেছে ভারত।

আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর