ইসরাইলি অবরোধের বিরুদ্ধে ফ্লোটিলার লড়াই

নিউজ ডেস্ক প্রকাশিত: ০৩ অক্টোবর ২০২৫ ০৯:১০ এএম

দখলদার ইসরাইল ফিলিস্তিনের গাজায় একদিকে নির্বিচারে গণহত্যা ও জাতিগত নিধন চালাচ্ছে, অন্যদিকে ক্ষুধার্ত ও আহতদের কাছে জরুরি ত্রাণ সহায়তা পৌঁছাতে বাধা দিচ্ছে। খাদ্য, পানি ও ওষুধের ঘাটতিতে অবরুদ্ধ গাজাবাসীকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। এটিকে স্পষ্টভাবে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ বলে আখ্যায়িত করেছে মানবাধিকার সংস্থাগুলো।

এরই মধ্যে ৪৫টির বেশি দেশের আন্তর্জাতিক মানবাধিকারকর্মীদের ৪৪টি জাহাজের একটি বিশাল নৌবহর খাদ্যসহায়তা ও জরুরি ওষুধ নিয়ে গাজাভিমুখে রওনা হয়। ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’ নামের এই বহরের মাধ্যমে গাজায় মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর চেষ্টা করেছে। এই আন্তর্জাতিক নৌবহরের লক্ষ্য হলো গাজা উপত্যকায় তেলআবিবের আরোপিত প্রায় সর্বাত্মক অবরোধ ভাঙা।

গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলায় অন্যতম অভিযাত্রী ছিলেন সুইডিশ জলবায়ুকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ। এতে বাংলাদেশ থেকে যোগ দিয়েছেন আলোকচিত্রী ও মানবাধিকারকর্মী শহীদুল আলম। এছাড়া ছিলেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত রুহি লরেন আখতার। তিনি ব্রিটেনের নিউক্যাসলের মানবতাবাদী কর্মী।

এবারের ফ্লোটিলাটি বিশ্বব্যাপী বড় ধরনের আলোচনার জন্ম দিয়েছে। কারণ এটি ফিলিস্তিনি উপত্যকায় পাঠানো অন্যতম বৃহত্তম নৌ-সহায়তা মিশন। ফ্লোটিলা অগ্রসর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আন্তর্জাতিক মনোযোগ আরো বাড়ে। স্পেন ও ইতালি নৌবাহিনীর জাহাজ পাঠায় এর অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ ও প্রয়োজনে সহায়তা দেওয়ার জন্য। পাশাপাশি ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানায়।

এই বহরে ৪৪টি বেসামরিক জাহাজ ও পাঁচ শতাধিক বেসামরিক অধিকারকর্মী ও সমর্থক অংশ নেন। যদিও গত বুধবার রাত থেকে ইসরাইলি বাহিনী একে একে এই জাহাজগুলোকে আটকে দেয় এবং যাত্রীদের ইসরাইলে নিয়ে যায়। তবে বহুবার অবৈধভাবে বাধা দেওয়ার পরও মিকেনো নামের একটি জাহাজ ফিলিস্তিনি জলসীমায় প্রবেশ করে গাজায় পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছে।

ইসরাইল আগেই ঘোষণা করেছিল যে, তারা যেকোনো মূল্যে এই ফ্লোটিলা আটকাবে। তারা দাবি করে, এই কর্মীরা ‘বৈধ নৌ অবরোধ’ ভাঙার চেষ্টা করছেÑযদিও এই দাবি আন্তর্জাতিক আইনের বিরোধী।

চলতি বছরের আগস্টে শুরু হওয়া গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা প্রথমে স্পেন ও ইতালির বন্দর থেকে রওনা হয়ে গ্রিস ও তিউনিসিয়ায় থামে এবং সেখান থেকে ভূমধ্যসাগর পেরিয়ে গাজার উদ্দেশে এগোয়। আয়োজকরা জানান, মিশনটি শুরু হয় ৫০টির বেশি জাহাজ নিয়ে, যা অন্তত ৪৪টি দেশের প্রতিনিধিত্ব করছিল। এতে শত শত আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবক, কর্মী ও সংসদ সদস্য অংশ নেন। আয়োজকদের মতে, এই যাত্রায় ২৪ জন ছিলেন আমেরিকার নাগরিক, যাদের কয়েকজন আবার সাবেক সেনা সদস্য।

ফ্লোটিলাটি প্রতীকী হলেও তাৎপর্যপূর্ণ মানবিক সহায়তা ছিল খাবার, চিকিৎসা সামগ্রী এবং গাজার মানুষের জন্য জরুরি কিছু জিনিসপত্র।

কর্মীরা জানায়, যাত্রাপথে তারা একাধিক বৈরী পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন। মাল্টা ও ক্রিট দ্বীপের কাছাকাছি সন্দেহভাজন ড্রোন হামলায় কয়েকটি জাহাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং কিছু জাহাজ যাত্রা থেকে সরে যেতে বাধ্য হয়। এরপরও যখন ফ্লোটিলা পূর্ব ভূমধ্যসাগরের দিকে পৌঁছায়, তখন বহরে ৪৪টি জাহাজ অবশিষ্ট ছিল।

প্রায় ২৪ লাখ মানুষের বসবাস করা গাজায় ইসরাইল প্রায় ১৮ বছর ধরে অবরোধ চালিয়ে আসছে। চলতি বছরের মার্চে সীমান্ত বন্ধ করে দিয়ে এবং খাদ্য ও ওষুধ প্রবেশ আটকে দিয়ে অবরোধ আরো কঠোর করে, যা এলাকাটিকে দুর্ভিক্ষের দিকে ঠেলে দিয়েছে। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরাইলি বোমা বর্ষণে এখন পর্যন্ত ৬৬ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু। জাতিসংঘ ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো বারবার সতর্ক করেছে যে গাজা ক্রমেই বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ছে, যেখানে অনাহার ও রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে।

মূলত ২০০৭ সালে হামাস গাজার নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর থেকেই ইসরাইল ভিন্ন ভিন্ন মাত্রায় এ অঞ্চলে অবরোধ জারি করে রেখেছে। ফলে গাজার বাসিন্দারা প্রায় সম্পূর্ণভাবে সেখানে বন্দি হয়ে পড়েছে। খাদ্য, পণ্য ও সহায়তা ঢোকার পথও কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত।

ফ্লোটিলা আয়োজকদের মতে, মানবিক সহায়তাবাহী নৌবহরকে ইসরাইলি বাহিনী আটকায়। গাজা উপকূল থেকে প্রায় ১৩০ কিলোমিটার দূরে তারা জাহাজগুলোতে ওঠে এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা কেটে দেয়, সংকেতও জ্যাম করে দেয়। প্রথম ধাপে অন্তত ১৩টি জাহাজকে সমুদ্রে আটকানো হয়। সে সময় আয়োজক সাইফ আবু কাশেক জানান, আটক হওয়া নৌকাগুলোতে ৩৭টি দেশের ২০১ জনের বেশি কর্মী ছিলেন। তিনি জানান, প্রায় ৩০টি নৌকা ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর বাধা এড়িয়ে গাজার উপকূলে পৌঁছানোর চেষ্টা করে। তবে এরপর একে একে জাহাজগুলো আটকে দেয় ইসারাইলি বাহিনী।

ফ্লোটিলার যাত্রা আগেই আন্তর্জাতিক দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল, আর কর্মীদের আটক করার ঘটনায় বুধবার রাতে রোম, বুয়েনস আইরেস ও ইস্তাম্বুলসহ বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ হয়। দিনের শুরুতে অধিকারকর্মীরা জানিয়েছিলেন, তাদের নৌযাত্রা চলাকালীন অপরিচিত জাহাজ ও ড্রোন তাদের পিছু নিয়েছিল, যা উত্তেজনা আরো বাড়িয়ে দেয়।

এক বিবৃতিতে ফ্লোটিলা আয়োজকরা জানায়, ‘বুধবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে আলমা, সিরিয়াস ও আদারা নামের জাহাজসহ গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার একাধিক বোট আন্তর্জাতিক জলসীমায় ইসরাইলি বাহিনী বেআইনিভাবে আটকে দেয়। তারা আরো অভিযোগ করে, ইসরাইলি নৌবাহিনী ইচ্ছাকৃতভাবে জাহাজগুলোর যোগাযোগ ব্যবস্থা নষ্ট করে, যাতে সাহায্যের জন্য কোনো বার্তা পাঠানো না যায় এবং সরাসরি সম্প্রচার বন্ধ হয়ে যায়।

যদিও এসব নৌকা প্রতীকী পরিমাণ সহায়তা বহন করছিল, তবুও তাদের মূল লক্ষ্য ছিল গাজার জন্য একটি সমুদ্রপথ খোলা। কারণ প্রায় দুই বছর ধরে চলা যুদ্ধের ফলে গাজায় ভয়াবহ মানবিক সংকট তৈরি হয়েছে।

ইসরাইলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে যেখানে সামরিক পোশাক পরা এক নারী নিজেকে ইসরাইলি নৌবাহিনীর প্রতিনিধি হিসেবে পরিচয় দিয়ে ফ্লোটিলার সঙ্গে ফোনে কথা বলছেন। সে সময় তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘ফ্লোটিলা একটি নিষিদ্ধ ও অবরুদ্ধ এলাকায় প্রবেশ করছে এবং গাজার জন্য কোনো সহায়তা পাঠাতে হলে তা ‘স্থাপিত সরকারি চ্যানেল’ দিয়েই যেতে হবে।

ইসরাইলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত আরেকটি ভিডিওতে দেখা যায়, সুইডিশ জলবায়ুকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ জাহাজের ডেকে বসে আছেন এবং চারপাশে সেনারা রয়েছে।

মন্ত্রণালয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে লিখেছে, ‘হামাস-সুমুদ ফ্লোটিলার কয়েকটি নৌকা নিরাপদে থামানো হয়েছে এবং যাত্রীদের ইসরাইলি বন্দরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। গ্রেটা ও তার সঙ্গীরা নিরাপদ ও সুস্থ আছেন।’

২০০৯ সাল থেকে ইসরাইল আনুষ্ঠানিকভাবে গাজায় নৌ অবরোধ চালু করেছে। তাদের দাবি, অস্ত্রপাচার ঠেকাতেই এই পদক্ষেপ জরুরি। তবে তারা আরো অভিযোগ করেছে, কিছু আয়োজক হামাসের সঙ্গে যুক্ত। তবে তাদের এই দাবিকে ‘ভিত্তিহীন দাবি’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন অধিকারকর্মীরা। এ অভিযোগের পক্ষে ইসরাইল এখনো কোনো প্রমাণ দিতে পারেনি।

গাজায় মানবিক সহায়তা পৌঁছে দিতে যাওয়া গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলাকে ইসরাইলি নৌবাহিনীর বাধায় বিশ্বজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। এ ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে বিভিন্ন দেশ। এর প্রতিবাদে ইসরাইলের কূটনীতিকদের বহিষ্কার করার ও রাষ্ট্রদূতকে তলব করার ঘটনাও ঘটেছে।

এদিকে ফ্লোটিলায় আটক ও ইসরাইলি হস্তক্ষেপের প্রতিবাদে ইস্তাম্বুল, এথেন্স, বুয়েনস আইরেস, রোম, বার্লিন ও মাদ্রিদসহ বহু শহরে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে। বিভিন্ন দেশের সরকার ও নেতারা এই ঘটনাকে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন এবং মানবিক সহায়তার প্রতি নিষ্ঠুরতা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।

তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইসরাইলি অভিযানকে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড হিসেবে উল্লেখ করেছে এবং বলেছেÑ এটি আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন। তারা আরো জানায়, নেতানিয়াহুর সরকার গাজাকে দুর্ভিক্ষের দিকে ঠেলে দিচ্ছে এবং এই ফ্লোটিলা হামলা তার ফ্যাসিবাদী সামরিক নীতিরই অংশ।

ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাইল বাকায়ি বলেন, এই নৃশংসতা হলো আন্তর্জাতিক আইনের প্রকাশ্য লঙ্ঘন এবং এক ধরনের সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ড।

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ইসরাইলি বাহিনীর হামলাকে কাপুরুষোচিত আক্রমণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি আটক অধিকারকর্মীদের নিরাপদ মুক্তি ও মানবিক সহায়তার অবাধ প্রবেশের পক্ষে কথা বলেছেন।

মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম বহরে থাকা সে দেশের নাগরিকদের দ্রুত মুক্তি দাবি করেন। তিনি বলেন, ইসরাইল শুধু ফিলিস্তিনিদের অধিকার নয়, বরং পুরো বিশ্বের বিবেককে উপেক্ষা করছে। তিনি ঘোষণা দেন, ইসরাইলকে জবাবদিহির আওতায় আনতে তার সরকার আন্তর্জাতিক আইনি পদক্ষেপ নেবে।

দক্ষিণ আফ্রিকার রাষ্ট্রপতি সিরিল রামাফোসা ফ্লোটিলায় অংশগ্রহণকারীদের তাৎক্ষণিক মুক্তির আহ্বান জানান। তিনি নিশ্চিত করেন যে, নেলসন ম্যান্ডেলার নাতি মান্ডলা ম্যান্ডেলা ওই ফ্লোটিলায় ছিলেন এবং তার মুক্তিও দাবি করেন। দক্ষিণ আফ্রিকা জানিয়েছে, এই ফ্লোটিলা গাজার সঙ্গে সংহতির প্রতীক।

কলম্বিয়ার রাষ্ট্রপতি গুস্তাভো পেট্রো ইসরাইলি কূটনীতিকদের বহিষ্কার এবং দেশটির সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি বাতিলের ঘোষণা দেন। তিনি জানান, কলম্বিয়া তাদের নাগরিকদের সুরক্ষায় ইসরাইলের বিরুদ্ধে আদালতে উপযুক্ত দাবি জানাবে।

ইতালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্তোনিও তাজানি জানিয়েছেন, ইসরাইল আশ্বাস দিয়েছে যে তারা কোনো সহিংস পদক্ষেপ নেয়নি। ইতালির বিভিন্ন শ্রমিক ইউনিয়ন গাজার প্রতি সংহতি জানিয়ে সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে।

যুক্তরাজ্য সরকার জানিয়েছে, তারা ফ্লোটিলা আটকের ঘটনায় অত্যন্ত উদ্বিগ্ন এবং সংশ্লিষ্ট ব্রিটিশ নাগরিকদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। তারা জোর দিয়ে বলেছে, বহরের বহন করা সাহায্য যেন মানবিক সংস্থার মাধ্যমে গাজায় পৌঁছে দেওয়া হয়।

গ্রিস ও আয়ারল্যান্ড যৌথ বিবৃতিতে ইসরাইলকে ফ্লোটিলায় অংশগ্রহণকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং প্রয়োজনীয় কনস্যুলার সহায়তা দিতে বলেছে।

আইরিশ রাষ্ট্রপতি মাইকেল ডি হিগিন্স বলেছেন, গাজায় জরুরি সহায়তা পৌঁছাতে ইসরাইল বাধা সৃষ্টি করছে এবং যারা এতে অংশ নিয়েছেন তাদের নিরাপত্তা একটি বৈশ্বিক উদ্বেগের বিষয়।

বেলজিয়ামের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ম্যাকসিম প্রেভো ফ্লোটিলা নৌকা আটককে অগ্রহণযোগ্য আখ্যায়িত করেছেন এবং জানিয়েছেন, তিনি ইসরাইলি রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছেন।

প্রেভো সংসদে বলেন, ‘যেভাবে এই জাহাজগুলোতে অভিযান চালানো হয়েছে এবং যেখান থেকে (আন্তর্জাতিক জলসীমায়) এগুলো আটক করা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য। এ কারণেই আমি রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছি।’

বিশ্লেষকরা বলেছেন, এই ফ্লোটিলা অভিযানে ইসরাইলের এমন আচরণ আবারও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে স্মরণ করিয়ে দিয়েছে যে, গাজার ওপর দীর্ঘমেয়াদি অবরোধ, যুদ্ধ ও মানবিক সংকট এখন শুধু একটি আঞ্চলিক ইস্যু নয়, বরং এটি বৈশ্বিক ন্যায়ের প্রশ্ন।

জানা গেছে, ২০১০ সাল থেকে একাধিকবার গাজা অবরোধ ভাঙতে নৌযান পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত হলো ২০১০ সালের মাভি মারমারার ঘটনা। তুরস্কের নৌযান মাভি মারমারা গাজা ফ্রিডম ফ্লোটিলার অংশ ছিল। ইসরাইলি কমান্ডোরা জাহাজে উঠে সংঘর্ষে জড়ায় এবং ১০ জন কর্মী নিহত হন। বিশ্বব্যাপী নিন্দা হয় এবং ইসরাইল-তুরস্ক সম্পর্ক মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরে ২০১৩ সালে ইসরাইল ‘অপারেশনাল ভুলের’ জন্য দুঃখ প্রকাশ করে। এখনো ক্ষতিপূরণের বিষয় নিয়ে আলোচনা চলছে। তুরস্কে ওই অভিযানে জড়িত ইসরাইলি সেনা ও কর্মকর্তাদের অনুপস্থিতিতে যুদ্ধাপরাধের বিচার চলছে।

এছাড়া ২০১১, ২০১৫ ও ২০১৮ সালে বেশ কয়েকটি ফ্লোটিলা যাত্রা করে। ইসরাইল সাধারণত এসব জাহাজকে আশদোদ বন্দরে নিয়ে যায়, কর্মীদের আটক করে এবং পণ্য বাজেয়াপ্ত করে। ২০২৪ সালেও ফ্লোটিলা প্রচেষ্টা হয়।

চলতি বছরে একাধিকবার ফ্লোটিলা গাজা অভিমুখে যাত্রা করেছে। এর মধ্যে জুন মাসে ম্যাডলিন নামের জাহাজ সিসিলির কাতানিয়া থেকে রওনা হয়। এতে খাদ্য, ওষুধ, শিশুখাদ্য ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ছিল, সঙ্গে ছিলেন অধিকারকর্মীরাও, যার মধ্যে গ্রেটা থুনবার্গও ছিলেন।

৯ জুন ভোরে আন্তর্জাতিক জলসীমায় ইসরাইলি নৌবাহিনী জাহাজটি আটকায়, একটি রাসায়নিক স্প্রে ব্যবহার করে জাহাজে ওঠে এবং ১২ জন কর্মীকে আটক করে। পরে তাদের ইসরাইলে নিয়ে গিয়ে প্রক্রিয়া শেষে বহিষ্কার করা হয়।

এদিকে গাজা সিটিতে আক্রমণ তীব্রতর করছে ইসরাইল, যখন হামাস যুদ্ধের অবসানের জন্য আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত একটি নতুন মার্কিন পরিকল্পনার বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানানোর বিষয়টি বিবেচনা করছে।

আরব ও তুর্কি মধ্যস্থতাকারীরা ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠনক হামাসকে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে হামাসের একজন জ্যেষ্ঠ নেতা বলেছেন, সশস্ত্র গোষ্ঠীটি সম্ভবত এটি প্রত্যাখ্যান করবে।

ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরাইল কাটজ শহরের লাখ লাখ ফিলিস্তিনিকে দক্ষিণ দিকে সরে যাওয়ার জন্য একটি চূড়ান্ত সতর্কতা জারি করেছেন। তিনি বলেছেন, অন্যথায় যারা রয়ে গেছেন তারা হামাসের বিরুদ্ধে আক্রমণের সময় ‘সন্ত্রাসী এবং সন্ত্রাসের সমর্থক’ হিসেবে গণ্য হবেন।

রেড ক্রসের আন্তর্জাতিক কমিটি জানিয়েছে, ‘আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের অধীনে, বেসামরিক নাগরিকরা গাজা শহরে থাকুক বা ছেড়ে যাক না কেন তাদের অবশ্যই সুরক্ষিত রাখতে হবে।’

আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর