দক্ষ ব্যাংক ব্যবস্থাপনা গড়া এখন বড় চ্যালেঞ্জ: গভর্নর

নিউজ ডেস্ক প্রকাশিত: ০৫ অক্টোবর ২০২৫ ০৯:১০ এএম

বাংলাদেশে দক্ষ ব্যাংক ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা এখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর।

শনিবার (৪ অক্টোবর) রাতে রাজধানীর ওয়েস্টিন হোটেলের বলরুমে ফিন্যান্সিয়াল এক্সিলেন্স লিমিটেডের ১৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।

গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, বর্তমানে ভালো ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। দেশে দক্ষ ব্যাংক ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। ব্যাংক খাতে ‘কোর ব্যাংকিং সিস্টেম’-এর বেশিরভাগই ভারতের, আমাদের এখন নিজস্ব সক্ষমতা বাড়াতে হবে।

তিনি আরও বলেন, যদিও ব্যাংকারদের প্রশিক্ষণের জন্য দেশে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান রয়েছে, কিন্তু সবচেয়ে কার্যকর প্রশিক্ষণ হয় কর্মক্ষেত্রে। দুঃখজনকভাবে, ব্যাংক খাতে প্রশিক্ষণ ও মানবসম্পদ উন্নয়নে যে বিনিয়োগ প্রয়োজন, আমাদের সেই সামর্থ্য এখনও গড়ে ওঠেনি।

রাজনৈতিক প্রভাব ব্যাংক খাতের সুশাসনের অন্যতম বাধা উল্লেখ করে গভর্নর বলেন, আমাদের ব্যাংকগুলো ঝুঁকি মূল্যায়ন না করেই একই ধরনের ব্যবসায় একযোগে ঋণ দেয়। ফলে অনেক সময় ব্যাংকগুলো ঝুঁকিতে পড়ে।

তিনি আরও জানান, দেশের আর্থিক খাতের আকার বর্তমানে জিডিপির ৫২ থেকে ৫৩ শতাংশের মধ্যে, যেখানে চীনে তা ২০০ শতাংশের বেশি এবং ভারতে প্রায় ১০০ শতাংশ।

‘বাংলাদেশের অবস্থান এ ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য নয়,’ মন্তব্য করেন গভর্নর আহসান মনসুর।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ব্যাংক কর্মকর্তাদের শুধু কারিগরি প্রশিক্ষণ যথেষ্ট নয়; তাদের মানসিক ও নৈতিক প্রশিক্ষণও জরুরি। কারণ প্রশিক্ষিত কিন্তু অসৎ মানুষ অপ্রশিক্ষিত মানুষের চেয়েও বেশি ক্ষতি করতে পারে।

তিনি আরও বলেন, আগামী তিন-চার মাস আমাদের জন্য আরও কঠিন সময় হতে পারে। আমাদের চেষ্টা থাকতে হবে পরবর্তী সরকারের জন্য একটি কার্যকর ভিত্তি তৈরি করে যাওয়া। যদি আমরা নিজেদের দায়িত্ব না বুঝি, জনগণই আমাদের জবাবদিহিতার মুখে দাঁড় করাবে। ইতিহাস কিন্তু পুনরাবৃত্তি হতে পারে, কারণ জনগণ এখন অনেক সচেতন।

নীতিনির্ধারণ ও নিয়ন্ত্রণে ঘাটতির স্বীকারোক্তি দিয়ে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, মাত্র ১৪ মাসে সব সমস্যা সমাধান সম্ভব নয়। এজন্য জনগণের ধৈর্য দরকার। আমরা চেষ্টা করছি আগামী কয়েক মাসে কিছু মৌলিক সংস্কার বাস্তবায়ন করতে।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ফিন্যান্সিয়াল এক্সিলেন্স লিমিটেডের চেয়ারম্যান মামুন রশীদ। তিনি জানান, ব্যাংক খাতের উন্নয়নে সংস্থাটি ইতোমধ্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) নির্ভর সমাধান, প্রকল্প ব্যবস্থাপনা, আলোচনার কৌশল ও সম্পর্ক ব্যবস্থাপনাসহ শতাধিক প্রশিক্ষণ আয়োজন করেছে।

সমাপনী বক্তব্য রাখেন অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও ফিন্যান্সিয়াল এক্সিলেন্স লিমিটেডের পরিচালক সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশের সিইও নাসের এজাজ বিজয়, অনন্ত গ্রুপের এমডি ও ইউসিবির চেয়ারম্যান শরীফ জহির, মাস্টারকার্ড বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল, বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর নূরুন নাহার ও হাবিবুর রহমান এবং সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুনসহ অনেকে।

আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর