চট্টগ্রামে উন্মুক্ত খালে পড়ে নিখোঁজ ৬ মাসের শিশু
চট্টগ্রাম নগরীর চকবাজার থানার কাপাসগোলা এলাকায় খোলা একটি খালে রিকশাসহ পড়ে গিয়ে তলিয়ে গেছে ছয় মাস বয়সী এক শিশু। শুক্রবার রাত ৮টার দিকে এ মর্মান্তিক দুর্ঘটনাটি ঘটে হিজড়া খাল এলাকায়। শিশুটিকে এখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি।
নিখোঁজ শিশুর নাম সেহেরিশ। তার বাবা মো. শহিদ এবং মা সালমা বেগম। পরিবারটি ওই এলাকায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিল। বিকেলে ঘোরাঘুরি শেষে রিকশায় করে ফেরার পথে কাপাসগোলা এলাকার সরু সড়কে ভারসাম্য হারিয়ে রিকশাটি খালে পড়ে যায়।
শিশুটির বাবা মো. শহিদ কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, শুক্রবার ছুটির দিন, তাই একটু ঘুরতে বের হয়েছিলাম। পথে রিকশা করে বোনের বাসা থেকে বাড়ির দিকে যাচ্ছিলাম। আমার স্ত্রী সালমা, ৬ মাসের ছোট মেয়ে সেহেরিশ একসঙ্গে রিকশায় ছিল। কাপাসগোলার সরু রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় হঠাৎ রিকশাটি ভারসাম্য হারিয়ে পাশের খালে পড়ে যায়। স্ত্রীকে উঠাতে পারলেও আমার সোনামণি তলিয়ে গেলো চোখের সামনে।
দুর্ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়ার পরপরই ঘটনাস্থলে ছুটে আসে ফায়ার সার্ভিস এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের উদ্ধারকারী দল। শুরু হয় ডুবুরি দিয়ে তল্লাশি অভিযান।
প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় দোকানি সাইফুল ইসলাম জানান, আমার দোকানের সামনেই রিকশাটা যাচ্ছিল। হঠাৎ দেখি হেলে গিয়ে খালে পড়ে গেলো। আমরা চিৎকার দিয়ে দৌড়ে যাই। মা-বাবাকে উঠানো গেলেও শিশুটাকে আর পাওয়া যায়নি। পানিটা এত ময়লা আর দুর্গন্ধে ভরা—চোখে দেখাও মুশকিল।
ঘটনার পর পরিদর্শনে গেলে দেখা যায়, খালটির আশপাশে কোনো ধরনের সুরক্ষা দেয়াল, রেলিং বা প্রতিবন্ধক নেই। খালের পাশ দিয়ে একদিকে গড়ে উঠেছে অস্থায়ী দোকানপাট, আরেকদিকে সরু রাস্তা দিয়ে চলছে রিকশা ও পথচারীদের চলাচল। দুর্ঘটনাস্থলে এখনও ডুবুরি দল উদ্ধার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, জনবহুল এ এলাকায় খোলা খালটি দীর্ঘদিন ধরেই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। কিন্তু চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন বা সিডিডিএ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
প্রত্যক্ষদর্শী মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, একটু বাঁশের বেড়াও যদি থাকতো, তাহলে রিকশাটা এমন করে পড়ে যেতো না। খালটার পাশে কোনো ধরনের সুরক্ষা নেই। আমরা বহুবার বলেছি স্থানীয় কাউন্সিলরকে, কিন্তু কেউ কর্ণপাত করেনি।
স্থানীয় ব্যবসায়ী মো. কাশেম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, প্রতিদিন আমরা দেখি মানুষ এই রাস্তা দিয়ে কোনোমতে চলাফেরা করে। খালের পাশ দিয়ে দোকান, রিকশা, মানুষ—সব চলছে গাদাগাদি করে। অথচ কোনো নিরাপত্তা নেই। আজ একটা নিষ্পাপ শিশু এই অব্যবস্থার বলি হলো।
নিখোঁজ সেহেরিশের আত্মীয় মো. মারুফ বলেন, শহিদ ভাইয়ের পরিবার আমাদের বাসায় বেড়াতে এসেছিল। এমন দুর্ঘটনার কথা কল্পনাও করিনি। খালটা কতবার বলেছি ঘিরে দিতে, রেলিং বসাতে—কেউ শোনেনি। এখন কার কাছে বিচার চাই?
চট্টগ্রামের মত ব্যস্ত ও ঘনবসতিপূর্ণ নগরীতে এমন উন্মুক্ত খাল বহু জায়গায় রয়েছে। নগর উন্নয়নের নামে সিটি করপোরেশন প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা ব্যয় করলেও জননিরাপত্তার বিষয়ে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেই—এমন অভিযোগ দীর্ঘদিনের। বিশেষ করে নিম্নবিত্ত এলাকায় এ ধরণের অনিরাপদ অবকাঠামোই দুর্ঘটনার বড় কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
এ ঘটনায় এলাকাবাসী দ্রুত খালের পাশে সুরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণ, অবৈধ দোকান উচ্ছেদ, এবং স্থায়ী ব্যারিকেড বা রেলিং নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন। একইসঙ্গে তারা চান, এ ধরনের দুর্ঘটনা যেন আর না ঘটে, তার জন্য নগর কর্তৃপক্ষ যেন জবাবদিহিতার মধ্যে আসে।
এদিকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন ঘটনাস্থলে উপস্থিত আছেন। তবে এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত শিশুটি নিখোঁজ রয়েছে। ফায়ার সার্ভিস ও উদ্ধারকারী দল সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত অভিযান চালালেও শিশুটিকে খুঁজে পাওয়া যায়নি।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: