চাকসু নির্বাচনে ভোট গ্রহণে ব্যাপক প্রস্তুতি ইমার্জেন্সি টিম চায় শিবির

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচন আগামীকাল বুধবার। ৩৫ বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এই ভোটযুদ্ধের ক্ষেত্র পরিচালনা করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ইতোমধ্যে ১২ সদস্যের একটি কমিশন গঠন করেছে। তবে এতে যাদের রাখা হয়েছে, তাদের নিয়ে উঠেছে নানা প্রশ্ন।
কমিশনের সদস্য তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, অন্তত পাঁচ শিক্ষক বর্তমানে বিএনপিপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামে সম্পৃক্ত। তাদের মধ্যে অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তৈয়ব চৌধুরী ফোরামের সহসভাপতি, অধ্যাপক মোহাম্মদ জাহেদুর রহমান চৌধুরী ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এবং ছাত্র উপদেষ্টা ড. আনোয়ার হোসেনও একই ফোরামের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া অধ্যাপক ড. মু. জাফর উল্লাহ তালুকদার ও অধ্যাপক ড. আমির মুহাম্মদ নসরুল্লাহও বিএনপিঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। আর অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ বিএনপি জামায়াত সমর্থিত সাদা দলে আছেন।
কমিশনের সদস্য সচিব অধ্যাপক ড. একেএম আরিফুল হক সিদ্দিকী এবং সদস্য অধ্যাপক ড. বেগম ইসমত আরা হক জামায়াতপন্থি শিক্ষক হিসেবে পরিচিত। অপরদিকে অধ্যাপক ড. রুমানা আক্তারকে কেউ কেউ নিরপেক্ষ বলেন, আবার কেউ তাকে জামায়াতঘনিষ্ঠ শিক্ষক বলে মনে করেন।
বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর ভোটার ও প্রার্থীরা সমালোচনায় মুখর হন। কয়েক প্রার্থী ও ভোটার বলেন, নির্বাচনে বিশেষ একটি প্যানেলের অনুসারীদের নির্বাচন কমিশনে আধিক্য থাকলে তার প্রভাব ভোটগ্রহণ ও গণনায় পড়তে পারে। অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগ নিয়ে তারা তালবাহানা করতে পারেন, এতে একটি পক্ষ বিশেষ সুবিধা পাওয়ার আশঙ্কা আছে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মনির উদ্দিন বলেন, আমি রাজনীতি করি না, বুঝিও না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দায়িত্ব দিয়েছে, আমি তা পালন করছি। সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কমিশন গঠিত হয়েছে। এখানে দুজন প্রভোস্ট, দুজন ডিন, দুজন বিভাগীয় চেয়ারম্যান, একজন ছাত্র উপদেষ্টা, একজন প্রক্টর ও কলেজ পরিদর্শক আছেন।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন বলেন, কমিশনের সবাইকে আমরা শপথ করিয়েছি। নির্বাচন কতটা স্বচ্ছ হবে, তা নির্ভর করবে কমিশনের কাজের ওপর। আমরা বিশ্বাস করি, তারা দায়িত্বশীলভাবে সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দেবেন।
চাকসু নির্বাচনের আগ মুহূর্তে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও দায়িত্বে অবহেলার সুনির্দিষ্ট অভিযোগের কারণে শাখা ছাত্রদলের সিনিয়র সহসভাপতি মোহাম্মদ মামুন উর রশিদ মামুনকে সাংগঠনিক পদ থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করেছে তার সংগঠন।
গত রোববার রাতে ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এ বহিষ্কারের তথ্য জানানো হয়। তবে বহিষ্কারের পেছনে চাকসু নির্বাচন ঘিরে চবি শাখা ছাত্রদলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও বিদ্রোহী প্যানেল দাঁড় করানোর কারণ রয়েছে বলে জানা গেছে।
ছাত্রদল সূত্রে জানা গেছে, চাকসু নির্বাচনে ছাত্রদল প্যানেলে মামুনের অনুসারী ছেলেদের তেমন কাউকে রাখা হয়নি। সিনিয়র সহসভাপতি হওয়ার পরও এমন অবজ্ঞা মামুন ও তার অনুসারীরা মেনে নেননি। তাই কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে ‘সার্বজনীন ছাত্র ঐক্য পরিষদ’ নামে স্বতন্ত্র প্যানেল দাঁড় করান মামুন। সেই প্যানেলে ভিপি, জিএস, এজিএসসহ সাত পদে ছাত্রদলের কর্মীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
বিদ্রোহী প্যানেল রুখতে কঠোর হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রদল। এরপর ভিপি প্রার্থী সাইদ রেদোয়ান ও দপ্তর সম্পাদক সাখাওয়াত হোসাইন কিছুদিন আগে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেন। তবে অন্য প্রার্থীরা নির্বাচন করার সিদ্ধান্তে অনড় থাকেন। এর জন্য মামুনকে দায়ী করে ছাত্রদলের অন্যান্য গ্রুপ। এ কারণে শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণ দেখিয়ে মামুনকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির ও শাখা সভাপতি আলাউদ্দিন মহসিনকে একাধিকবার ফোন করলেও তারা সাড়া দেননি। বহিষ্কারের বিষয়ে জানতে চেয়ে ছাত্রদল নেতা মামুনুর রশীদ মামুনকে একাধিকবার ফোন করলে তিনিও সাড়া দেননি।
চাকসু নির্বাচনের দিন তাৎক্ষণিক অভিযোগ সমাধানের জন্য ‘ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিম’ গঠনের দাবি জানিয়েছে ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘সম্প্রীতির শিক্ষার্থী জোট’। গতকাল সোমবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বুদ্ধিজীবী চত্বরে সংবাদ সম্মেলনে প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী সাঈদ বিন হাবিব লিখিত বক্তব্যে এ দাবি জানান। তিনি বলেন, নির্বাচনের দিন প্রশাসন ও প্রতিটি প্যানেলের প্রতিনিধি নিয়ে একটি বিশেষ টিম থাকলে অভিযোগগুলো দ্রুত ও স্বচ্ছভাবে নিষ্পত্তি করা সম্ভব হবে।
বুধবার সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত চাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের ভোট হবে। এ নির্বাচনে প্রার্থী রয়েছেন ৯০৭ জন। এর মধ্যে চাকসুর ২৬ পদের বিপরীতে ৪১৫ জন এবং হল সংসদে ৪৮৬ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। নির্বাচনে ভোটার রয়েছেন ২৭ হাজার ৫২১ জন। এর মধ্যে ছাত্র ১৬ হাজার ৮৪ ও ছাত্রী ১১ হাজার ৩২৯ জন।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: