প্রতিষ্ঠার ৪১ বছরেও হাকিমপুর সরকারি কলেজে চালু হয়নি স্নাতক ও স্নাতকোত্তর

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৩:০৯ পিএম

কৌশিক চৌধুরী, হিলি প্রতিনিধি: মুক্তিযুদ্ধের পর সীমান্তবর্তী হিলি হাকিমপুর উপজেলায় ১৯৮৪ সালে স্থাপিত হাকিমপুর ডিগ্রি কলেজ। এরপর ২০১৮ সালের ৮ই আগস্ট জাতীয়করণ করা হয় কলেজটিকে। দীর্ঘদিন ধরে প্রতিষ্ঠানটি সীমান্তবর্তী এলাকায় ছড়িয়ে আসছে শিক্ষার আলো।

প্রতিষ্ঠার ৪১ বছরেও কলেজটিতে চালু করা হয়নি স্নাতক ও স্নাতকোত্তর।  অন্যদিকে নানা সমস্যায় জর্জরিত কলেজটি,নেই অবকাঠামো উন্নয়ন কিংবা উচ্চ শিক্ষার ব্যবস্থা। দীর্ঘদিন ধরে ভুগছে শিক্ষক সংকটে,এতে চরম বির্পযয়ে কলেজটির শিক্ষা ব্যবস্থা। দ্রুত শিক্ষক সংকট কাটানোর পাশাপাশি সব সমস্যার সমাধান করা না গেলে মুখ থুবড়ে পড়বে এ অঞ্চলের শিক্ষা ব্যবস্থা।
 
হাকিমপুর সরকারি ডিগ্রি কলেজের তথ্যমতে, কলেজটি জাতীয়করণ হওয়ার পর থেকে চাইলেও কলেজ কর্তৃপক্ষ শিক্ষক নিয়োগ দিতে পারছেন না।১ হাজার ১শ ৭১জন শিক্ষার্থীর কলেজটিতে একজন উপাধ্যক্ষসহ ২০ জন শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। এরমধ্যে ইংরেজি, অর্থনীতি,প্রাণী বিজ্ঞান, উদ্ভিদ বিজ্ঞান,ইতিহাস এই ৫টি বিষয়ে ১০ জন শিক্ষক থাকার কথা থাকলেও একজন শিক্ষকও নেই এসব বিষয়ে। এছাড়াও দুইজনের জায়গায় একজন করে শিক্ষক রয়েছে রাষ্ট্র বিজ্ঞান, সমাজ বিজ্ঞান, হিসাব বিজ্ঞান, ইসলামের ইতিহাস, ভূগোল,মনোবিজ্ঞান, মার্কেটিং,গণিত ও রসায়নে বিভাগে। এসব বিভাগে প্রায় ৯ জনের মতো শিক্ষক সংকট রয়েছে। 
 
হাকিমপুর সরকারি ডিগ্রি কলেজের একাদশ শ্রেণিতে পড়ুয়া সোনিয়া আক্তার বলেন,আমাদের বেশিরভাগ বিষয়ের শিক্ষক নেই। কোনোদিন ক্লাস হয় আবার কোনো দিন হয় না। আমাদের বাহিরে প্রাইভেট ও কোচিং এর ওপর ভর করে চলতে হচ্ছে। আমরা চাই আমাদের কলেজে দ্রুত শিক্ষক সংকট কাটিয়ে উঠুক এতে আমাদের পড়াশোনার মান বাড়বে।
 
ডিগ্রি ১ম বর্ষে অধ্যায়নরত শিক্ষার্থী রেজাউল আলম  বলেন,আমি এইচএসসি পাশ করার পর খুব ইচ্ছে ছিল অর্নাসে পড়াশোনা করবো কিন্তু বাবা-মায়ের অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ যার কারনে বাহিরে থেকে পড়াতে পারবে না বলে এখানেই ডিগ্রিতে ভর্তি হয়েছি। এখানে যদি অর্নাস ও মাস্টার্স চালু থাকতো তাহলে আমাদের মতো শিক্ষার্থীদের উপকার হতো। আমরা অল্প খরচে এলাকাতে থেকেই পড়তে পারতাম। 
 
শিক্ষার্থীর অভিভাবক রফিকুল ইসলাম বলেন, চাইলেও আমাদের সন্তানকে হাকিমপুর সরকারি ডিগ্রি কলেজে অর্নাস কিংবা মাস্টার্সে পড়াতে পারি না। কারন এখানে এসব চালু নেই। আমরা চাই সরকার দ্রুত এসব চালু করে দিয়ে আমাদের সন্তানদের উচ্চ শিক্ষা নেওয়ার সুযোগ করে দিবে।
 
স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মী গোলাম রব্বানী বলেন, হিলিতে তেমন কলকারখানা না থাকায় সীমান্তবর্তী এলাকার মানুষ গুলো বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষ।যার ফলে অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপের কারনে সন্তানদের উচ্চ শিক্ষার জন্য বাহিরে পাঠাতে পারে না। তাই সরকার যদি হাকিমপুর সরকারি ডিগ্রি কলেজে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর চালু করে তাহলে অল্প খরচে এসব পরিবারের সন্তানরা পড়তে পাড়বে। সরকারের কাছে অনুরোধ কলেজটির অবকাঠামো উন্নয়ন সহ দ্রুত এসব সমস্যার সমাধানে নজর দিবেন। 
 
হাকিমপুর সরকারি ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক এনামুল হক বলেন, আমি কিছু দিন হলো এই কলেজে অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেছি।দীর্ঘদিন ধরেই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে কলেজের পক্ষ থেকে শিক্ষকের চাহিদা পাঠানো হচ্ছে কিন্তু এখনো শিক্ষক না পাওয়ায় খন্ডকালীন কিছু শিক্ষক দিয়ে পাঠদান চালানো হচ্ছে।  যেহেতু শিক্ষক নেই সে কারনে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর চালু করা সুযোগ নেই।  যখন সরকার পর্যাপ্ত শিক্ষক নিয়োগ দিবে তখন এসব চালু করা হবে।

LIMON

আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর